বিশেষ প্রতিবেদন
দুই দিনের নরকযন্ত্রণা। সন্তানকে জিম্মি রেখে পালাক্রমে নয় নয়টি শ্বাসরুদ্ধকর বর্বরতার অধ্যায়। মুক্তির আশায় পুলিশের দ্বারে যাওয়া—কিন্তু সেখানে ন্যায়বিচারের বদলে অপমানের আরেকটি দগদগে ক্ষত। অশিক্ষিত হওয়ার অপরাধে যিনি বুঝতেই পারেননি—আইনের আশ্রয়ে গিয়ে নিজেকেই পতিতা হিসেবে সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে!এটাই ২৬ বছরের তরুণী নাসিমার (ছদ্মনাম) জীবন কাহিনি—যেটি আজও রক্তাক্ত, আজও অশ্রুসিক্ত।নৃশংসতার চূড়ান্ত রূপগণধর্ষণের পর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক নিশ্চিত করেন—তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে সিগারেটের আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। প্রতিটি দাগ নীরব সাক্ষী হয়ে আছে সেই অসহ্য যন্ত্রণার, যা কেবল পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট মানুষই দিতে পারে।থানায় বিচার না পেয়ে নাসিমা আশ্রয় নেন দেশের সর্বোচ্চ পুলিশপ্রধান ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে। লিখিত আবেদনের পর অবশেষে মামলা রুজু হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত, ঢাকা-তে (পিটিশন মামলা নং-৬২, তারিখ ১৪/০৭/২০২৫ ইং)।কারা এই অভিযুক্তরা?
মামলায় ৯ জনকে নামীয় আসামি ও ৬/৭ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। নামীয় আসামিরা হলেন—
১. শফিক ওরফে মোহন (৩৮), মোগড়াপাড়া, নারায়ণগঞ্জ২. মো. সোহাগ মিয়া (৪০), কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া৩. তৌয়বুর রহমান (২৫), হাসনাবাদ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা৪. কামাল হোসেন (৩৫), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা৫. মেরাজ হোসেন (৩৫), কদমতলী, ঢাকা৬. দিনা ইসলাম (৩৫), গৌরনদী, বরিশাল।৭. আবুল কাশেম ভুঁইয়া (৪০), সরাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়া৮. শাহিন ওরফে সিলেট্টা শাহিন (৩৮), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা৯. এনামুল ইসলাম ইমু (২৭), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
এছাড়া অজ্ঞাত আসামি ৬/৭ জন, যারা ১৪৭ নং আরামবাগ হোল্ডিংয়ের মালিক, কর্মচারী ও ভাড়াটিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে মামলাটি মতিঝিল থানার তদন্তাধীন।
ভিকটিমের কান্না ও ক্ষোভ
নাসিমা ভেঙে পড়া কণ্ঠে বলেন— “আমি নিরাশ হয়ে আইনের কাছে এসেছি বিচার চাইতে। অসহায়ের মতো আইনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে। আমি কি বিচার পাবো না? কবে অপরাধীরা আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে?”
তার চোখে জল, কণ্ঠে ক্ষোভ, আর হৃদয়ে সেই প্রশ্ন—এই দেশে কি গরিব, অশিক্ষিত নারীর জন্য ন্যায়বিচার নেই?
আমাদের পরবর্তী অনুসন্ধান
নাসিমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের পেছনের চেহারা উন্মোচনের কাজ শুরু করেছে আমাদের অনুসন্ধানী দল। তাদের আয়ের উৎস, অপরাধজগতের সংযোগ, এবং তাদের লুকিয়ে থাকা চেহারার ছবি সহ, অতীত অপরাধের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করা হবে পরবর্তী প্রতিবেদনে।
ন্যায়বিচারের লড়াই থেমে নেই—থামবেও না।